
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠন নিয়ে একটি ভিন্নধর্মী ও দীর্ঘমেয়াদি স্বপ্ন লালন করতেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার মাত্র এক দিন আগে, গত ৮ ডিসেম্বর, দেশের একটি বেসরকারি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তরুণদের ভবিষ্যৎ, কর্মসংস্থান সংকট, বিসিএসকেন্দ্রিক সমাজব্যবস্থা এবং উদ্যোক্তা তৈরির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
সাক্ষাৎকারে শরিফ ওসমান হাদি বলেন, তিনি আপাতত কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে কাজ করতে চেয়েছিলেন, যার অন্যতম ছিল দেশের তরুণদের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা। তার মতে, বাংলাদেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের সেকেন্ড ইয়ার, থার্ড ইয়ার এমনকি ফাইনাল ইয়ারে পড়া শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ জানেই না—পড়াশোনা শেষ করার পর তারা কী করবে। এই বাস্তবতাকে তিনি ‘ভীষণ হতাশাজনক’ বলে উল্লেখ করেন।
হাদি বলেন, বাংলাদেশে তরুণদের সামনে কার্যত একটি মাত্র লক্ষ্য তৈরি করে রাখা হয়েছে—বিসিএস। প্রতিবছর প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় আবেদন করলেও নিয়োগ পান মাত্র দুই হাজার থেকে দুই হাজার দুইশ’ জন। ফলে চার থেকে পাঁচ বছর সময় নষ্ট হয়ে যায়। বিসিএসের প্রতি এই অতিরিক্ত মোহ কেন-তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, নবম গ্রেডের একজন ক্যাডার কর্মকর্তার প্রাথমিক বেতন ২৬ থেকে ২৭ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার মতো। যদি কেউ ঘুষ না খায় বা হারাম উপার্জন না করে, তাহলে এই বেতনে সম্মানজনক জীবনযাপন করাই কঠিন।
তিনি বলেন, প্রশাসন বা পুলিশ ক্যাডার ধরলেও বেতন ও আনুষঙ্গিক সুবিধা মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার বেশি হয় না। অথচ বাংলাদেশে এমন অসংখ্য বেসরকারি চাকরি রয়েছে, যেখানে এক লাখ টাকার বেশি সম্মানজনক বেতন পাওয়া সম্ভব। তা সত্ত্বেও কেন তরুণরা বছরের পর বছর বিসিএসের পেছনে ছুটে এবং ক্যাডার হতে না পেরে অনেকে হতাশায় আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়—এর পেছনের কারণ হিসেবে তিনি গত ১৫ বছরের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার কথা তুলে ধরেন।
হাদি বলেন, এই সময়ে যার পরিবারে একজন পুলিশ ক্যাডার আছে, সে গুম, খুন বা ক্রসফায়ারের মতো ঝুঁকি থেকে অনেকটাই নিরাপদ থাকে। যার পরিবারে প্রশাসন, ট্যাক্স বা কাস্টমস ক্যাডার আছে, তার ক্ষেত্রেও এসব ঘটনা সাধারণত ঘটে না। এমনকি থানায় গিয়ে একটি সাধারণ জিডি করতেও ক্যাডার আত্মীয় না থাকলে অনেক সময় সমস্যায় পড়তে হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে নতুন লড়াই হলো-আপনি যেই রাজনৈতিক দলেরই হোন, এমনকি ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক হলেও অন্যায় হলে থানায় গিয়ে মামলা বা জিডি করতে পারবেন কি না। তার ভাষায়, যদি বিসিএস প্রশাসন, পুলিশ, ট্যাক্স বা কাস্টমস ক্যাডার হয়ে কেউ এক পয়সা হারাম খেতে না পারে, তাহলে ভবিষ্যতে আর কেউ বিসিএস পরীক্ষাই দিতে চাইবে না। কারণ ৪৫ হাজার টাকার বেতনে ৯০ হাজার টাকার ঘড়ি পরলে দুদক প্রশ্ন করবে—এই ঘড়ি কোথা থেকে এলো। তখন সেই জীবনযাপন আর সম্ভব হবে না।
এই বাস্তবতায় সমাধান হিসেবে উদ্যোক্তা তৈরির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন শরিফ ওসমান হাদি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সব সরকারই মুখে উদ্যোক্তা হওয়ার কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে উদ্যোক্তা হতে গিয়ে ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে আবেদন করলেও পাঁচ লাখ টাকার ঋণের জন্য ঘুষ, দালাল এবং জটিল প্রক্রিয়ার মুখে পড়তে হয়। সৎ পথে গেলে উদ্যোগ নেওয়াই প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে, আর দুই নম্বর পথে গেলে সব অনুমোদন সহজেই মেলে।
এই প্রেক্ষাপটে নিজের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে হাদি জানান, তার লক্ষ্য ছিল অন্তত পাঁচ হাজার তরুণকে স্কিল-বেজড ট্রেনিং দেওয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের এই প্রশিক্ষণের আওতায় আনার পরিকল্পনা ছিল তার। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অন্তত ১০টি ইনস্টিটিউটের সঙ্গে কথা বলেছেন, যারা এই উদ্যোগে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
এই প্রশিক্ষণের একটি বড় অংশ ছিল ভাষা শিক্ষা। ইংরেজির পাশাপাশি আরবি, ফরাসি, স্প্যানিশ, জাতিসংঘের ব্যবহৃত তিনটি ভাষা এবং চীনা ভাষা শেখানোর পরিকল্পনা ছিল। হাদি বলেন, চীন একটি বিশাল বাজার, ইউরোপে স্প্যানিশ ও ফরাসির চাহিদা ব্যাপক। আরবি ভাষাকে বাংলাদেশে শুধু ধর্মীয় পাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে, অথচ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ভাষাজ্ঞান থাকলে বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। ভাষা না জানার কারণে অনেক বাংলাদেশি সেখানে কাঙ্ক্ষিত আয় করতে পারছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে হাদি বলেন, তিনি নিজে প্রায় ১০ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষা পড়িয়েছেন। নিজেই ট্রেনিং দেওয়ার পাশাপাশি একটি দক্ষ টিম গড়ে তুলে বিভিন্ন ভাষার প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। এর সঙ্গে আইসিটি-কেন্দ্রিক বিভিন্ন ভোকেশনাল ট্রেনিং যুক্ত করে অনার্স পড়াকালীনই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের একটি স্পষ্ট গাইডলাইন দেওয়ার লক্ষ্য ছিল।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠান তার এই পরিকল্পনা শুনে যোগাযোগ করেছে এবং উদ্যোগ শুরু হলে বিনামূল্যে সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তরুণদের ক্ষমতায়নের পাশাপাশি ঢাকা কার্টেলভিত্তিক চাঁদাবাজি বন্ধের কথাও তিনি উল্লেখ করেন। বড় সিন্ডিকেট পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হবে কি না জানেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তত দুইটি জায়গায় পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
প্রসঙ্গত, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে দুর্বৃত্তরা শরিফ ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান।
শুক্রবার সন্ধ্যায় তার মরদেহ দেশে আনা হয়। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো মানুষ অংশ নেন। জানাজার নামাজ পড়ান তার বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। শোক আর আবেগে সে সময় পুরো এলাকায় ভারী পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সূত্র; আরটিভি

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠন নিয়ে একটি ভিন্নধর্মী ও দীর্ঘমেয়াদি স্বপ্ন লালন করতেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার মাত্র এক দিন আগে, গত ৮ ডিসেম্বর, দেশের একটি বেসরকারি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তরুণদের ভবিষ্যৎ, কর্মসংস্থান সংকট, বিসিএসকেন্দ্রিক সমাজব্যবস্থা এবং উদ্যোক্তা তৈরির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
সাক্ষাৎকারে শরিফ ওসমান হাদি বলেন, তিনি আপাতত কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে কাজ করতে চেয়েছিলেন, যার অন্যতম ছিল দেশের তরুণদের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা। তার মতে, বাংলাদেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের সেকেন্ড ইয়ার, থার্ড ইয়ার এমনকি ফাইনাল ইয়ারে পড়া শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ জানেই না—পড়াশোনা শেষ করার পর তারা কী করবে। এই বাস্তবতাকে তিনি ‘ভীষণ হতাশাজনক’ বলে উল্লেখ করেন।
হাদি বলেন, বাংলাদেশে তরুণদের সামনে কার্যত একটি মাত্র লক্ষ্য তৈরি করে রাখা হয়েছে—বিসিএস। প্রতিবছর প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় আবেদন করলেও নিয়োগ পান মাত্র দুই হাজার থেকে দুই হাজার দুইশ’ জন। ফলে চার থেকে পাঁচ বছর সময় নষ্ট হয়ে যায়। বিসিএসের প্রতি এই অতিরিক্ত মোহ কেন-তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, নবম গ্রেডের একজন ক্যাডার কর্মকর্তার প্রাথমিক বেতন ২৬ থেকে ২৭ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার মতো। যদি কেউ ঘুষ না খায় বা হারাম উপার্জন না করে, তাহলে এই বেতনে সম্মানজনক জীবনযাপন করাই কঠিন।
তিনি বলেন, প্রশাসন বা পুলিশ ক্যাডার ধরলেও বেতন ও আনুষঙ্গিক সুবিধা মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার বেশি হয় না। অথচ বাংলাদেশে এমন অসংখ্য বেসরকারি চাকরি রয়েছে, যেখানে এক লাখ টাকার বেশি সম্মানজনক বেতন পাওয়া সম্ভব। তা সত্ত্বেও কেন তরুণরা বছরের পর বছর বিসিএসের পেছনে ছুটে এবং ক্যাডার হতে না পেরে অনেকে হতাশায় আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়—এর পেছনের কারণ হিসেবে তিনি গত ১৫ বছরের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার কথা তুলে ধরেন।
হাদি বলেন, এই সময়ে যার পরিবারে একজন পুলিশ ক্যাডার আছে, সে গুম, খুন বা ক্রসফায়ারের মতো ঝুঁকি থেকে অনেকটাই নিরাপদ থাকে। যার পরিবারে প্রশাসন, ট্যাক্স বা কাস্টমস ক্যাডার আছে, তার ক্ষেত্রেও এসব ঘটনা সাধারণত ঘটে না। এমনকি থানায় গিয়ে একটি সাধারণ জিডি করতেও ক্যাডার আত্মীয় না থাকলে অনেক সময় সমস্যায় পড়তে হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে নতুন লড়াই হলো-আপনি যেই রাজনৈতিক দলেরই হোন, এমনকি ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক হলেও অন্যায় হলে থানায় গিয়ে মামলা বা জিডি করতে পারবেন কি না। তার ভাষায়, যদি বিসিএস প্রশাসন, পুলিশ, ট্যাক্স বা কাস্টমস ক্যাডার হয়ে কেউ এক পয়সা হারাম খেতে না পারে, তাহলে ভবিষ্যতে আর কেউ বিসিএস পরীক্ষাই দিতে চাইবে না। কারণ ৪৫ হাজার টাকার বেতনে ৯০ হাজার টাকার ঘড়ি পরলে দুদক প্রশ্ন করবে—এই ঘড়ি কোথা থেকে এলো। তখন সেই জীবনযাপন আর সম্ভব হবে না।
এই বাস্তবতায় সমাধান হিসেবে উদ্যোক্তা তৈরির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন শরিফ ওসমান হাদি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সব সরকারই মুখে উদ্যোক্তা হওয়ার কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে উদ্যোক্তা হতে গিয়ে ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে আবেদন করলেও পাঁচ লাখ টাকার ঋণের জন্য ঘুষ, দালাল এবং জটিল প্রক্রিয়ার মুখে পড়তে হয়। সৎ পথে গেলে উদ্যোগ নেওয়াই প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে, আর দুই নম্বর পথে গেলে সব অনুমোদন সহজেই মেলে।
এই প্রেক্ষাপটে নিজের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে হাদি জানান, তার লক্ষ্য ছিল অন্তত পাঁচ হাজার তরুণকে স্কিল-বেজড ট্রেনিং দেওয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের এই প্রশিক্ষণের আওতায় আনার পরিকল্পনা ছিল তার। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অন্তত ১০টি ইনস্টিটিউটের সঙ্গে কথা বলেছেন, যারা এই উদ্যোগে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
এই প্রশিক্ষণের একটি বড় অংশ ছিল ভাষা শিক্ষা। ইংরেজির পাশাপাশি আরবি, ফরাসি, স্প্যানিশ, জাতিসংঘের ব্যবহৃত তিনটি ভাষা এবং চীনা ভাষা শেখানোর পরিকল্পনা ছিল। হাদি বলেন, চীন একটি বিশাল বাজার, ইউরোপে স্প্যানিশ ও ফরাসির চাহিদা ব্যাপক। আরবি ভাষাকে বাংলাদেশে শুধু ধর্মীয় পাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে, অথচ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ভাষাজ্ঞান থাকলে বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। ভাষা না জানার কারণে অনেক বাংলাদেশি সেখানে কাঙ্ক্ষিত আয় করতে পারছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে হাদি বলেন, তিনি নিজে প্রায় ১০ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষা পড়িয়েছেন। নিজেই ট্রেনিং দেওয়ার পাশাপাশি একটি দক্ষ টিম গড়ে তুলে বিভিন্ন ভাষার প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। এর সঙ্গে আইসিটি-কেন্দ্রিক বিভিন্ন ভোকেশনাল ট্রেনিং যুক্ত করে অনার্স পড়াকালীনই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের একটি স্পষ্ট গাইডলাইন দেওয়ার লক্ষ্য ছিল।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠান তার এই পরিকল্পনা শুনে যোগাযোগ করেছে এবং উদ্যোগ শুরু হলে বিনামূল্যে সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তরুণদের ক্ষমতায়নের পাশাপাশি ঢাকা কার্টেলভিত্তিক চাঁদাবাজি বন্ধের কথাও তিনি উল্লেখ করেন। বড় সিন্ডিকেট পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হবে কি না জানেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তত দুইটি জায়গায় পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
প্রসঙ্গত, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে দুর্বৃত্তরা শরিফ ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান।
শুক্রবার সন্ধ্যায় তার মরদেহ দেশে আনা হয়। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো মানুষ অংশ নেন। জানাজার নামাজ পড়ান তার বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। শোক আর আবেগে সে সময় পুরো এলাকায় ভারী পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সূত্র; আরটিভি

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠন নিয়ে একটি ভিন্নধর্মী ও দীর্ঘমেয়াদি স্বপ্ন লালন করতেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার মাত্র এক দিন আগে, গত ৮ ডিসেম্বর, দেশের একটি বেসরকারি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তরুণদের ভবিষ্যৎ, কর্মসংস্থান সংকট, বিসিএসকেন্দ্রিক সমাজব্যবস্থা এবং উদ্যোক্তা তৈরির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
সাক্ষাৎকারে শরিফ ওসমান হাদি বলেন, তিনি আপাতত কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে কাজ করতে চেয়েছিলেন, যার অন্যতম ছিল দেশের তরুণদের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা। তার মতে, বাংলাদেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের সেকেন্ড ইয়ার, থার্ড ইয়ার এমনকি ফাইনাল ইয়ারে পড়া শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ জানেই না—পড়াশোনা শেষ করার পর তারা কী করবে। এই বাস্তবতাকে তিনি ‘ভীষণ হতাশাজনক’ বলে উল্লেখ করেন।
হাদি বলেন, বাংলাদেশে তরুণদের সামনে কার্যত একটি মাত্র লক্ষ্য তৈরি করে রাখা হয়েছে—বিসিএস। প্রতিবছর প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় আবেদন করলেও নিয়োগ পান মাত্র দুই হাজার থেকে দুই হাজার দুইশ’ জন। ফলে চার থেকে পাঁচ বছর সময় নষ্ট হয়ে যায়। বিসিএসের প্রতি এই অতিরিক্ত মোহ কেন-তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, নবম গ্রেডের একজন ক্যাডার কর্মকর্তার প্রাথমিক বেতন ২৬ থেকে ২৭ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার মতো। যদি কেউ ঘুষ না খায় বা হারাম উপার্জন না করে, তাহলে এই বেতনে সম্মানজনক জীবনযাপন করাই কঠিন।
তিনি বলেন, প্রশাসন বা পুলিশ ক্যাডার ধরলেও বেতন ও আনুষঙ্গিক সুবিধা মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার বেশি হয় না। অথচ বাংলাদেশে এমন অসংখ্য বেসরকারি চাকরি রয়েছে, যেখানে এক লাখ টাকার বেশি সম্মানজনক বেতন পাওয়া সম্ভব। তা সত্ত্বেও কেন তরুণরা বছরের পর বছর বিসিএসের পেছনে ছুটে এবং ক্যাডার হতে না পেরে অনেকে হতাশায় আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়—এর পেছনের কারণ হিসেবে তিনি গত ১৫ বছরের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার কথা তুলে ধরেন।
হাদি বলেন, এই সময়ে যার পরিবারে একজন পুলিশ ক্যাডার আছে, সে গুম, খুন বা ক্রসফায়ারের মতো ঝুঁকি থেকে অনেকটাই নিরাপদ থাকে। যার পরিবারে প্রশাসন, ট্যাক্স বা কাস্টমস ক্যাডার আছে, তার ক্ষেত্রেও এসব ঘটনা সাধারণত ঘটে না। এমনকি থানায় গিয়ে একটি সাধারণ জিডি করতেও ক্যাডার আত্মীয় না থাকলে অনেক সময় সমস্যায় পড়তে হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে নতুন লড়াই হলো-আপনি যেই রাজনৈতিক দলেরই হোন, এমনকি ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক হলেও অন্যায় হলে থানায় গিয়ে মামলা বা জিডি করতে পারবেন কি না। তার ভাষায়, যদি বিসিএস প্রশাসন, পুলিশ, ট্যাক্স বা কাস্টমস ক্যাডার হয়ে কেউ এক পয়সা হারাম খেতে না পারে, তাহলে ভবিষ্যতে আর কেউ বিসিএস পরীক্ষাই দিতে চাইবে না। কারণ ৪৫ হাজার টাকার বেতনে ৯০ হাজার টাকার ঘড়ি পরলে দুদক প্রশ্ন করবে—এই ঘড়ি কোথা থেকে এলো। তখন সেই জীবনযাপন আর সম্ভব হবে না।
এই বাস্তবতায় সমাধান হিসেবে উদ্যোক্তা তৈরির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন শরিফ ওসমান হাদি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সব সরকারই মুখে উদ্যোক্তা হওয়ার কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে উদ্যোক্তা হতে গিয়ে ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে আবেদন করলেও পাঁচ লাখ টাকার ঋণের জন্য ঘুষ, দালাল এবং জটিল প্রক্রিয়ার মুখে পড়তে হয়। সৎ পথে গেলে উদ্যোগ নেওয়াই প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে, আর দুই নম্বর পথে গেলে সব অনুমোদন সহজেই মেলে।
এই প্রেক্ষাপটে নিজের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে হাদি জানান, তার লক্ষ্য ছিল অন্তত পাঁচ হাজার তরুণকে স্কিল-বেজড ট্রেনিং দেওয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের এই প্রশিক্ষণের আওতায় আনার পরিকল্পনা ছিল তার। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অন্তত ১০টি ইনস্টিটিউটের সঙ্গে কথা বলেছেন, যারা এই উদ্যোগে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
এই প্রশিক্ষণের একটি বড় অংশ ছিল ভাষা শিক্ষা। ইংরেজির পাশাপাশি আরবি, ফরাসি, স্প্যানিশ, জাতিসংঘের ব্যবহৃত তিনটি ভাষা এবং চীনা ভাষা শেখানোর পরিকল্পনা ছিল। হাদি বলেন, চীন একটি বিশাল বাজার, ইউরোপে স্প্যানিশ ও ফরাসির চাহিদা ব্যাপক। আরবি ভাষাকে বাংলাদেশে শুধু ধর্মীয় পাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে, অথচ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ভাষাজ্ঞান থাকলে বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। ভাষা না জানার কারণে অনেক বাংলাদেশি সেখানে কাঙ্ক্ষিত আয় করতে পারছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে হাদি বলেন, তিনি নিজে প্রায় ১০ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষা পড়িয়েছেন। নিজেই ট্রেনিং দেওয়ার পাশাপাশি একটি দক্ষ টিম গড়ে তুলে বিভিন্ন ভাষার প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। এর সঙ্গে আইসিটি-কেন্দ্রিক বিভিন্ন ভোকেশনাল ট্রেনিং যুক্ত করে অনার্স পড়াকালীনই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের একটি স্পষ্ট গাইডলাইন দেওয়ার লক্ষ্য ছিল।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠান তার এই পরিকল্পনা শুনে যোগাযোগ করেছে এবং উদ্যোগ শুরু হলে বিনামূল্যে সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তরুণদের ক্ষমতায়নের পাশাপাশি ঢাকা কার্টেলভিত্তিক চাঁদাবাজি বন্ধের কথাও তিনি উল্লেখ করেন। বড় সিন্ডিকেট পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হবে কি না জানেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তত দুইটি জায়গায় পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
প্রসঙ্গত, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে দুর্বৃত্তরা শরিফ ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান।
শুক্রবার সন্ধ্যায় তার মরদেহ দেশে আনা হয়। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো মানুষ অংশ নেন। জানাজার নামাজ পড়ান তার বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। শোক আর আবেগে সে সময় পুরো এলাকায় ভারী পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সূত্র; আরটিভি

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠন নিয়ে একটি ভিন্নধর্মী ও দীর্ঘমেয়াদি স্বপ্ন লালন করতেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার মাত্র এক দিন আগে, গত ৮ ডিসেম্বর, দেশের একটি বেসরকারি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তরুণদের ভবিষ্যৎ, কর্মসংস্থান সংকট, বিসিএসকেন্দ্রিক সমাজব্যবস্থা এবং উদ্যোক্তা তৈরির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
সাক্ষাৎকারে শরিফ ওসমান হাদি বলেন, তিনি আপাতত কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে কাজ করতে চেয়েছিলেন, যার অন্যতম ছিল দেশের তরুণদের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা। তার মতে, বাংলাদেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের সেকেন্ড ইয়ার, থার্ড ইয়ার এমনকি ফাইনাল ইয়ারে পড়া শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ জানেই না—পড়াশোনা শেষ করার পর তারা কী করবে। এই বাস্তবতাকে তিনি ‘ভীষণ হতাশাজনক’ বলে উল্লেখ করেন।
হাদি বলেন, বাংলাদেশে তরুণদের সামনে কার্যত একটি মাত্র লক্ষ্য তৈরি করে রাখা হয়েছে—বিসিএস। প্রতিবছর প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় আবেদন করলেও নিয়োগ পান মাত্র দুই হাজার থেকে দুই হাজার দুইশ’ জন। ফলে চার থেকে পাঁচ বছর সময় নষ্ট হয়ে যায়। বিসিএসের প্রতি এই অতিরিক্ত মোহ কেন-তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, নবম গ্রেডের একজন ক্যাডার কর্মকর্তার প্রাথমিক বেতন ২৬ থেকে ২৭ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার মতো। যদি কেউ ঘুষ না খায় বা হারাম উপার্জন না করে, তাহলে এই বেতনে সম্মানজনক জীবনযাপন করাই কঠিন।
তিনি বলেন, প্রশাসন বা পুলিশ ক্যাডার ধরলেও বেতন ও আনুষঙ্গিক সুবিধা মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার বেশি হয় না। অথচ বাংলাদেশে এমন অসংখ্য বেসরকারি চাকরি রয়েছে, যেখানে এক লাখ টাকার বেশি সম্মানজনক বেতন পাওয়া সম্ভব। তা সত্ত্বেও কেন তরুণরা বছরের পর বছর বিসিএসের পেছনে ছুটে এবং ক্যাডার হতে না পেরে অনেকে হতাশায় আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়—এর পেছনের কারণ হিসেবে তিনি গত ১৫ বছরের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার কথা তুলে ধরেন।
হাদি বলেন, এই সময়ে যার পরিবারে একজন পুলিশ ক্যাডার আছে, সে গুম, খুন বা ক্রসফায়ারের মতো ঝুঁকি থেকে অনেকটাই নিরাপদ থাকে। যার পরিবারে প্রশাসন, ট্যাক্স বা কাস্টমস ক্যাডার আছে, তার ক্ষেত্রেও এসব ঘটনা সাধারণত ঘটে না। এমনকি থানায় গিয়ে একটি সাধারণ জিডি করতেও ক্যাডার আত্মীয় না থাকলে অনেক সময় সমস্যায় পড়তে হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে নতুন লড়াই হলো-আপনি যেই রাজনৈতিক দলেরই হোন, এমনকি ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক হলেও অন্যায় হলে থানায় গিয়ে মামলা বা জিডি করতে পারবেন কি না। তার ভাষায়, যদি বিসিএস প্রশাসন, পুলিশ, ট্যাক্স বা কাস্টমস ক্যাডার হয়ে কেউ এক পয়সা হারাম খেতে না পারে, তাহলে ভবিষ্যতে আর কেউ বিসিএস পরীক্ষাই দিতে চাইবে না। কারণ ৪৫ হাজার টাকার বেতনে ৯০ হাজার টাকার ঘড়ি পরলে দুদক প্রশ্ন করবে—এই ঘড়ি কোথা থেকে এলো। তখন সেই জীবনযাপন আর সম্ভব হবে না।
এই বাস্তবতায় সমাধান হিসেবে উদ্যোক্তা তৈরির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন শরিফ ওসমান হাদি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সব সরকারই মুখে উদ্যোক্তা হওয়ার কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে উদ্যোক্তা হতে গিয়ে ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে আবেদন করলেও পাঁচ লাখ টাকার ঋণের জন্য ঘুষ, দালাল এবং জটিল প্রক্রিয়ার মুখে পড়তে হয়। সৎ পথে গেলে উদ্যোগ নেওয়াই প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে, আর দুই নম্বর পথে গেলে সব অনুমোদন সহজেই মেলে।
এই প্রেক্ষাপটে নিজের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে হাদি জানান, তার লক্ষ্য ছিল অন্তত পাঁচ হাজার তরুণকে স্কিল-বেজড ট্রেনিং দেওয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের এই প্রশিক্ষণের আওতায় আনার পরিকল্পনা ছিল তার। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অন্তত ১০টি ইনস্টিটিউটের সঙ্গে কথা বলেছেন, যারা এই উদ্যোগে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
এই প্রশিক্ষণের একটি বড় অংশ ছিল ভাষা শিক্ষা। ইংরেজির পাশাপাশি আরবি, ফরাসি, স্প্যানিশ, জাতিসংঘের ব্যবহৃত তিনটি ভাষা এবং চীনা ভাষা শেখানোর পরিকল্পনা ছিল। হাদি বলেন, চীন একটি বিশাল বাজার, ইউরোপে স্প্যানিশ ও ফরাসির চাহিদা ব্যাপক। আরবি ভাষাকে বাংলাদেশে শুধু ধর্মীয় পাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে, অথচ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ভাষাজ্ঞান থাকলে বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। ভাষা না জানার কারণে অনেক বাংলাদেশি সেখানে কাঙ্ক্ষিত আয় করতে পারছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে হাদি বলেন, তিনি নিজে প্রায় ১০ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষা পড়িয়েছেন। নিজেই ট্রেনিং দেওয়ার পাশাপাশি একটি দক্ষ টিম গড়ে তুলে বিভিন্ন ভাষার প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। এর সঙ্গে আইসিটি-কেন্দ্রিক বিভিন্ন ভোকেশনাল ট্রেনিং যুক্ত করে অনার্স পড়াকালীনই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের একটি স্পষ্ট গাইডলাইন দেওয়ার লক্ষ্য ছিল।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠান তার এই পরিকল্পনা শুনে যোগাযোগ করেছে এবং উদ্যোগ শুরু হলে বিনামূল্যে সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তরুণদের ক্ষমতায়নের পাশাপাশি ঢাকা কার্টেলভিত্তিক চাঁদাবাজি বন্ধের কথাও তিনি উল্লেখ করেন। বড় সিন্ডিকেট পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হবে কি না জানেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তত দুইটি জায়গায় পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
প্রসঙ্গত, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে দুর্বৃত্তরা শরিফ ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান।
শুক্রবার সন্ধ্যায় তার মরদেহ দেশে আনা হয়। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো মানুষ অংশ নেন। জানাজার নামাজ পড়ান তার বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। শোক আর আবেগে সে সময় পুরো এলাকায় ভারী পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সূত্র; আরটিভি
এখনও কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!