কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অবস্থিত প্রাচীন জলাধার জগন্নাথ দিঘি প্রায় ৩০০ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী। পরীর দিঘি নামেও পরিচিত বিশাল এই দিঘিটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই অবস্থান করছে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই দিঘি এক অনন্য প্রাচীন নিদর্শন। প্রায় ১২২ দশমিক ৫ বিঘা জমি নিয়ে খননকৃত এই জলাধারকে দেশের অন্যতম বৃহৎ ঐতিহাসিক দিঘি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দিঘিটির নামানুসারে পাশের ইউনিয়নের নামকরণ করা হয়েছে জগন্নাথ দিঘি ইউনিয়ন। প্রতিদিনই এই দিঘির পাড়ে ভিড় করেন দূর-দূরান্তের দর্শনার্থীরা।
ইতিহাসে জানা যায়, তৎকালীন ত্রিপুরা রাজ্যের উদয়পুরের জমিদার ও পরবর্তীতে মহারাজা খেতাবপ্রাপ্ত সমশের গাজী ১৭ শতকের পূর্বে এই দিঘিটি খনন করেন। ত্রিপুরা রাজ্যের শাসনামলে মহারাজা সমশের গাজী বহু জনহিতকর কাজের মধ্য থেকে এই দিঘি খনন ছিল অন্যতম একটি অবদান।
১৭৩৯ সালের দিকে এ অঞ্চলের তৎকালীন হিন্দু জমিদার জগন্নাথ সেনের নামানুসারে এই দিঘির নামকরণ করা হয় জগন্নাথ দিঘি। কথাসাহিত্যিক জহির রায়হান তার হাজার বছর ধরে উপন্যাসে এই দিঘির উল্লেখ করেছেন এবং বর্ণনা করেছেন, এক বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে পরীরা এই দিঘি খনন করেছিল। সেই থেকেই এটি পরীর দিঘি নামেও পরিচিত।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, যাতায়াত সুবিধা ভালো হওয়ায় দিঘির চারপাশে গড়ে উঠেছে বসতি। আশির দশকে দিঘির পূর্ব ও দক্ষিণ পাড়ে সরকারিভাবে গড়ে তোলা হয় ১০০ পরিবারের একটি আদর্শগ্রাম বা গুচ্ছগ্রাম।
বর্তমানে গুচ্ছগ্রাম ও আশপাশের বসতিকে কেন্দ্র করে এখানে হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। দিঘির পশ্চিম পাড় ঘেঁষেই রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোরলেন মহাসড়ক। পাশে রয়েছে নারাণকরা জামেয়া মাদরাসা নামক একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, একটি কলেজ এবং একটি বিদ্যালয়। দিঘির উত্তর পাড়ে রয়েছে একটি গণকবর এবং দক্ষিণ কোণের পশ্চিমে একটি সরকারি ডাক বাংলো। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের অনেক স্মৃতিচিহ্ন এখনও এই দিঘিকে ঘিরে রয়েছে।
দিঘির চারপাশে ছায়াঘেরা শান্তিপূর্ণ মনোরম পরিবেশ, নানান প্রজাতির গাছ ও পাখির কলরবে এখানকার পরিবেশ আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই প্রকৃতি ও ইতিহাসপ্রেমী মানুষ এই দিঘির সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। মহাসড়কের পাশেই হওয়ায় অনেকে গাড়ি থামিয়ে জলাধারের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পথে যাতায়াতকারী প্রাইভেটকার, জিপ, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন বাহনের যাত্রীদের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকেও বহু মানুষ আসেন পরীর দিঘি দেখতে।
স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক মীর শাহ আলম বলেন, প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এই দিঘির পানি কখনো শুকায়নি। তৎকালীন মহারাজা প্রজাদের পানির প্রয়োজন মেটাতে এই দিঘি খনন করেছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল আফসান বলেন, এটি একটি রহস্যময় দিঘি। এর পানি শুকাতে কেউ কখনও দেখেনি। স্বচ্ছ পানির এই দিঘিটি জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। নিজ চোখে না দেখলে এর সৌন্দর্য বোঝানো কঠিন।
দর্শনার্থী জুনায়েদ জিসান বলেন, পূর্বপুরুষদের মুখে দিঘির গল্প শুনেছি। নিজে দেখার খুব ইচ্ছা ছিল। তাই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে এসেছি। দিঘির পাশে দাঁড়ালেই শরীরে মৃদু বাতাস লাগে। স্বচ্ছ পানি ও মনোরম পরিবেশে মুগ্ধ হয়েছি।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জামাল হোসেন বলেন, জগন্নাথ দিঘি একটি প্রাচীন ও ব্যতিক্রমধর্মী ঐতিহ্য। বিশাল আয়তনের জন্য উপন্যাসে একে পরীর দিঘি বলা হয়েছে। এটি শুধু কুমিল্লা নয় বরং দেশের অন্যতম ঐতিহাসিক জলাধার। দিঘির নান্দনিক সৌন্দর্য রক্ষা ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ সতর্ক নজরদারিতে রয়েছে।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অবস্থিত প্রাচীন জলাধার জগন্নাথ দিঘি প্রায় ৩০০ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী। পরীর দিঘি নামেও পরিচিত বিশাল এই দিঘিটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই অবস্থান করছে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই দিঘি এক অনন্য প্রাচীন নিদর্শন। প্রায় ১২২ দশমিক ৫ বিঘা জমি নিয়ে খননকৃত এই জলাধারকে দেশের অন্যতম বৃহৎ ঐতিহাসিক দিঘি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দিঘিটির নামানুসারে পাশের ইউনিয়নের নামকরণ করা হয়েছে জগন্নাথ দিঘি ইউনিয়ন। প্রতিদিনই এই দিঘির পাড়ে ভিড় করেন দূর-দূরান্তের দর্শনার্থীরা।
ইতিহাসে জানা যায়, তৎকালীন ত্রিপুরা রাজ্যের উদয়পুরের জমিদার ও পরবর্তীতে মহারাজা খেতাবপ্রাপ্ত সমশের গাজী ১৭ শতকের পূর্বে এই দিঘিটি খনন করেন। ত্রিপুরা রাজ্যের শাসনামলে মহারাজা সমশের গাজী বহু জনহিতকর কাজের মধ্য থেকে এই দিঘি খনন ছিল অন্যতম একটি অবদান।
১৭৩৯ সালের দিকে এ অঞ্চলের তৎকালীন হিন্দু জমিদার জগন্নাথ সেনের নামানুসারে এই দিঘির নামকরণ করা হয় জগন্নাথ দিঘি। কথাসাহিত্যিক জহির রায়হান তার হাজার বছর ধরে উপন্যাসে এই দিঘির উল্লেখ করেছেন এবং বর্ণনা করেছেন, এক বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে পরীরা এই দিঘি খনন করেছিল। সেই থেকেই এটি পরীর দিঘি নামেও পরিচিত।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, যাতায়াত সুবিধা ভালো হওয়ায় দিঘির চারপাশে গড়ে উঠেছে বসতি। আশির দশকে দিঘির পূর্ব ও দক্ষিণ পাড়ে সরকারিভাবে গড়ে তোলা হয় ১০০ পরিবারের একটি আদর্শগ্রাম বা গুচ্ছগ্রাম।
বর্তমানে গুচ্ছগ্রাম ও আশপাশের বসতিকে কেন্দ্র করে এখানে হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। দিঘির পশ্চিম পাড় ঘেঁষেই রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোরলেন মহাসড়ক। পাশে রয়েছে নারাণকরা জামেয়া মাদরাসা নামক একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, একটি কলেজ এবং একটি বিদ্যালয়। দিঘির উত্তর পাড়ে রয়েছে একটি গণকবর এবং দক্ষিণ কোণের পশ্চিমে একটি সরকারি ডাক বাংলো। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের অনেক স্মৃতিচিহ্ন এখনও এই দিঘিকে ঘিরে রয়েছে।
দিঘির চারপাশে ছায়াঘেরা শান্তিপূর্ণ মনোরম পরিবেশ, নানান প্রজাতির গাছ ও পাখির কলরবে এখানকার পরিবেশ আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই প্রকৃতি ও ইতিহাসপ্রেমী মানুষ এই দিঘির সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। মহাসড়কের পাশেই হওয়ায় অনেকে গাড়ি থামিয়ে জলাধারের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পথে যাতায়াতকারী প্রাইভেটকার, জিপ, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন বাহনের যাত্রীদের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকেও বহু মানুষ আসেন পরীর দিঘি দেখতে।
স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক মীর শাহ আলম বলেন, প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এই দিঘির পানি কখনো শুকায়নি। তৎকালীন মহারাজা প্রজাদের পানির প্রয়োজন মেটাতে এই দিঘি খনন করেছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল আফসান বলেন, এটি একটি রহস্যময় দিঘি। এর পানি শুকাতে কেউ কখনও দেখেনি। স্বচ্ছ পানির এই দিঘিটি জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। নিজ চোখে না দেখলে এর সৌন্দর্য বোঝানো কঠিন।
দর্শনার্থী জুনায়েদ জিসান বলেন, পূর্বপুরুষদের মুখে দিঘির গল্প শুনেছি। নিজে দেখার খুব ইচ্ছা ছিল। তাই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে এসেছি। দিঘির পাশে দাঁড়ালেই শরীরে মৃদু বাতাস লাগে। স্বচ্ছ পানি ও মনোরম পরিবেশে মুগ্ধ হয়েছি।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জামাল হোসেন বলেন, জগন্নাথ দিঘি একটি প্রাচীন ও ব্যতিক্রমধর্মী ঐতিহ্য। বিশাল আয়তনের জন্য উপন্যাসে একে পরীর দিঘি বলা হয়েছে। এটি শুধু কুমিল্লা নয় বরং দেশের অন্যতম ঐতিহাসিক জলাধার। দিঘির নান্দনিক সৌন্দর্য রক্ষা ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ সতর্ক নজরদারিতে রয়েছে।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অবস্থিত প্রাচীন জলাধার জগন্নাথ দিঘি প্রায় ৩০০ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী। পরীর দিঘি নামেও পরিচিত বিশাল এই দিঘিটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই অবস্থান করছে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই দিঘি এক অনন্য প্রাচীন নিদর্শন। প্রায় ১২২ দশমিক ৫ বিঘা জমি নিয়ে খননকৃত এই জলাধারকে দেশের অন্যতম বৃহৎ ঐতিহাসিক দিঘি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দিঘিটির নামানুসারে পাশের ইউনিয়নের নামকরণ করা হয়েছে জগন্নাথ দিঘি ইউনিয়ন। প্রতিদিনই এই দিঘির পাড়ে ভিড় করেন দূর-দূরান্তের দর্শনার্থীরা।
ইতিহাসে জানা যায়, তৎকালীন ত্রিপুরা রাজ্যের উদয়পুরের জমিদার ও পরবর্তীতে মহারাজা খেতাবপ্রাপ্ত সমশের গাজী ১৭ শতকের পূর্বে এই দিঘিটি খনন করেন। ত্রিপুরা রাজ্যের শাসনামলে মহারাজা সমশের গাজী বহু জনহিতকর কাজের মধ্য থেকে এই দিঘি খনন ছিল অন্যতম একটি অবদান।
১৭৩৯ সালের দিকে এ অঞ্চলের তৎকালীন হিন্দু জমিদার জগন্নাথ সেনের নামানুসারে এই দিঘির নামকরণ করা হয় জগন্নাথ দিঘি। কথাসাহিত্যিক জহির রায়হান তার হাজার বছর ধরে উপন্যাসে এই দিঘির উল্লেখ করেছেন এবং বর্ণনা করেছেন, এক বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে পরীরা এই দিঘি খনন করেছিল। সেই থেকেই এটি পরীর দিঘি নামেও পরিচিত।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, যাতায়াত সুবিধা ভালো হওয়ায় দিঘির চারপাশে গড়ে উঠেছে বসতি। আশির দশকে দিঘির পূর্ব ও দক্ষিণ পাড়ে সরকারিভাবে গড়ে তোলা হয় ১০০ পরিবারের একটি আদর্শগ্রাম বা গুচ্ছগ্রাম।
বর্তমানে গুচ্ছগ্রাম ও আশপাশের বসতিকে কেন্দ্র করে এখানে হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। দিঘির পশ্চিম পাড় ঘেঁষেই রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোরলেন মহাসড়ক। পাশে রয়েছে নারাণকরা জামেয়া মাদরাসা নামক একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, একটি কলেজ এবং একটি বিদ্যালয়। দিঘির উত্তর পাড়ে রয়েছে একটি গণকবর এবং দক্ষিণ কোণের পশ্চিমে একটি সরকারি ডাক বাংলো। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের অনেক স্মৃতিচিহ্ন এখনও এই দিঘিকে ঘিরে রয়েছে।
দিঘির চারপাশে ছায়াঘেরা শান্তিপূর্ণ মনোরম পরিবেশ, নানান প্রজাতির গাছ ও পাখির কলরবে এখানকার পরিবেশ আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই প্রকৃতি ও ইতিহাসপ্রেমী মানুষ এই দিঘির সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। মহাসড়কের পাশেই হওয়ায় অনেকে গাড়ি থামিয়ে জলাধারের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পথে যাতায়াতকারী প্রাইভেটকার, জিপ, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন বাহনের যাত্রীদের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকেও বহু মানুষ আসেন পরীর দিঘি দেখতে।
স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক মীর শাহ আলম বলেন, প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এই দিঘির পানি কখনো শুকায়নি। তৎকালীন মহারাজা প্রজাদের পানির প্রয়োজন মেটাতে এই দিঘি খনন করেছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল আফসান বলেন, এটি একটি রহস্যময় দিঘি। এর পানি শুকাতে কেউ কখনও দেখেনি। স্বচ্ছ পানির এই দিঘিটি জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। নিজ চোখে না দেখলে এর সৌন্দর্য বোঝানো কঠিন।
দর্শনার্থী জুনায়েদ জিসান বলেন, পূর্বপুরুষদের মুখে দিঘির গল্প শুনেছি। নিজে দেখার খুব ইচ্ছা ছিল। তাই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে এসেছি। দিঘির পাশে দাঁড়ালেই শরীরে মৃদু বাতাস লাগে। স্বচ্ছ পানি ও মনোরম পরিবেশে মুগ্ধ হয়েছি।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জামাল হোসেন বলেন, জগন্নাথ দিঘি একটি প্রাচীন ও ব্যতিক্রমধর্মী ঐতিহ্য। বিশাল আয়তনের জন্য উপন্যাসে একে পরীর দিঘি বলা হয়েছে। এটি শুধু কুমিল্লা নয় বরং দেশের অন্যতম ঐতিহাসিক জলাধার। দিঘির নান্দনিক সৌন্দর্য রক্ষা ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ সতর্ক নজরদারিতে রয়েছে।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অবস্থিত প্রাচীন জলাধার জগন্নাথ দিঘি প্রায় ৩০০ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী। পরীর দিঘি নামেও পরিচিত বিশাল এই দিঘিটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই অবস্থান করছে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই দিঘি এক অনন্য প্রাচীন নিদর্শন। প্রায় ১২২ দশমিক ৫ বিঘা জমি নিয়ে খননকৃত এই জলাধারকে দেশের অন্যতম বৃহৎ ঐতিহাসিক দিঘি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দিঘিটির নামানুসারে পাশের ইউনিয়নের নামকরণ করা হয়েছে জগন্নাথ দিঘি ইউনিয়ন। প্রতিদিনই এই দিঘির পাড়ে ভিড় করেন দূর-দূরান্তের দর্শনার্থীরা।
ইতিহাসে জানা যায়, তৎকালীন ত্রিপুরা রাজ্যের উদয়পুরের জমিদার ও পরবর্তীতে মহারাজা খেতাবপ্রাপ্ত সমশের গাজী ১৭ শতকের পূর্বে এই দিঘিটি খনন করেন। ত্রিপুরা রাজ্যের শাসনামলে মহারাজা সমশের গাজী বহু জনহিতকর কাজের মধ্য থেকে এই দিঘি খনন ছিল অন্যতম একটি অবদান।
১৭৩৯ সালের দিকে এ অঞ্চলের তৎকালীন হিন্দু জমিদার জগন্নাথ সেনের নামানুসারে এই দিঘির নামকরণ করা হয় জগন্নাথ দিঘি। কথাসাহিত্যিক জহির রায়হান তার হাজার বছর ধরে উপন্যাসে এই দিঘির উল্লেখ করেছেন এবং বর্ণনা করেছেন, এক বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে পরীরা এই দিঘি খনন করেছিল। সেই থেকেই এটি পরীর দিঘি নামেও পরিচিত।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, যাতায়াত সুবিধা ভালো হওয়ায় দিঘির চারপাশে গড়ে উঠেছে বসতি। আশির দশকে দিঘির পূর্ব ও দক্ষিণ পাড়ে সরকারিভাবে গড়ে তোলা হয় ১০০ পরিবারের একটি আদর্শগ্রাম বা গুচ্ছগ্রাম।
বর্তমানে গুচ্ছগ্রাম ও আশপাশের বসতিকে কেন্দ্র করে এখানে হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। দিঘির পশ্চিম পাড় ঘেঁষেই রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোরলেন মহাসড়ক। পাশে রয়েছে নারাণকরা জামেয়া মাদরাসা নামক একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, একটি কলেজ এবং একটি বিদ্যালয়। দিঘির উত্তর পাড়ে রয়েছে একটি গণকবর এবং দক্ষিণ কোণের পশ্চিমে একটি সরকারি ডাক বাংলো। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের অনেক স্মৃতিচিহ্ন এখনও এই দিঘিকে ঘিরে রয়েছে।
দিঘির চারপাশে ছায়াঘেরা শান্তিপূর্ণ মনোরম পরিবেশ, নানান প্রজাতির গাছ ও পাখির কলরবে এখানকার পরিবেশ আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই প্রকৃতি ও ইতিহাসপ্রেমী মানুষ এই দিঘির সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। মহাসড়কের পাশেই হওয়ায় অনেকে গাড়ি থামিয়ে জলাধারের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পথে যাতায়াতকারী প্রাইভেটকার, জিপ, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন বাহনের যাত্রীদের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকেও বহু মানুষ আসেন পরীর দিঘি দেখতে।
স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক মীর শাহ আলম বলেন, প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এই দিঘির পানি কখনো শুকায়নি। তৎকালীন মহারাজা প্রজাদের পানির প্রয়োজন মেটাতে এই দিঘি খনন করেছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল আফসান বলেন, এটি একটি রহস্যময় দিঘি। এর পানি শুকাতে কেউ কখনও দেখেনি। স্বচ্ছ পানির এই দিঘিটি জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। নিজ চোখে না দেখলে এর সৌন্দর্য বোঝানো কঠিন।
দর্শনার্থী জুনায়েদ জিসান বলেন, পূর্বপুরুষদের মুখে দিঘির গল্প শুনেছি। নিজে দেখার খুব ইচ্ছা ছিল। তাই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে এসেছি। দিঘির পাশে দাঁড়ালেই শরীরে মৃদু বাতাস লাগে। স্বচ্ছ পানি ও মনোরম পরিবেশে মুগ্ধ হয়েছি।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জামাল হোসেন বলেন, জগন্নাথ দিঘি একটি প্রাচীন ও ব্যতিক্রমধর্মী ঐতিহ্য। বিশাল আয়তনের জন্য উপন্যাসে একে পরীর দিঘি বলা হয়েছে। এটি শুধু কুমিল্লা নয় বরং দেশের অন্যতম ঐতিহাসিক জলাধার। দিঘির নান্দনিক সৌন্দর্য রক্ষা ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ সতর্ক নজরদারিতে রয়েছে।
এখনও কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!